অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা। দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে হাজারের বেশি দাবানল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো দেশে ১ হাজার ৪৬টি দাবানল জ্বলছিল, যার অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলের কিউবেক পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দাবানাল। পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলোর রাজধানী ইয়েলোনাইফ থেকে মাত্র নয় মাইল দূরে চলে এসেছে দাবানল। শহরটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শহরটির ২০ হাজার বাসিন্দার প্রায় সবাইকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানায়, শহরটি ছাড়ার জন্য সড়ক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হলেও হাজার হাজার মানুষকে জরুরি ফ্লাইটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। দাবানল থেকে ধোঁয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। খারাপ হয়ে গেছে বায়ুর গুণমান।
দাবানলের কারণে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে আগত এবং বহির্গামী বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটের একটি আপডেটে বলা হয়েছিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ ফ্লাইটটি ছাড়ার পরে ইয়েলোনাইফ বিমানবন্দরের মধ্যে এবং বাইরে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার জরুরি ফ্লাইটে এক হাজারের বেশি লোককে ইয়েলোনাইফ থেকে বের করে আনা হয়েছিল। এখন যারা দাবানল থেকে বাঁচতে ইয়োলোনাইফ ছাড়ছেন, কয়েক দিন আগে তাঁদের অনেকই একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। দাবানলের আগুনের জেরে তাঁরা চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ফোর্ট স্মিথ ও হে রিভার শহর ছেড়ে ইয়োলোনাইফে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
শহরের মেয়রের অনুমান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়েলোনাইফের ১৯ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকে এখনো শহরের উপকণ্ঠের দিকে এগিয়ে আসা দাবানল থেকে বাঁচতে বিমানবন্দরগুলোতে ভিড় করছে। সড়কগুলোতে চাপ বাড়ছে।
মেয়র রেবেকা আলটি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা পুরো শহরটি খালি করতে পেরেছি। তবে কয়েকটি ভালো দিন মানে এই নয় যে আমরা নিরাপদ আছি। আমাদের এখনও অনেক পথ যেতে হবে।’
শুক্রবার রাতে এডমন্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর নাগরিকদের বিমানে সরিয়ে নেওয়া এবং অগ্নিনির্বাপক প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য কানাডিয়ান সরকার “উল্লেখযোগ্য সামরিক সম্পদ” মোতায়েন করেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার বলেছেন, ‘আমরা সবচেয়ে দুর্বলদের সাহায্য করার দিকে মনোনিবেশ করব এবং যতক্ষণ সময় লাগবে ততক্ষণ সেখানে থাকব।’
ইয়োলোনাইফের থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার উত্তরে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কেলোনা শহর থেকেও দাবানলের মুখে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। শহরটির পশ্চিমাঞ্চলে কিছু অবকাঠামো ইতিমধ্যেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
কেলোনার প্রায় ৫ হাজার লোক এখন সরিয়ে নেওয়ার আদেশের অধীনে রয়েছেন। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে অনেকগুলি বাড়িসহ আগুনে বেশ কয়েকটি কাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। তবে, প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনী উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ এবং এয়ারলিফটিং প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। রয়্যাল কানাডিয়ান এয়ার ফোর্স আঞ্চলিক জরুরি ক্রুদের সহায়তার জন্য বেশ কয়েকটি বিমান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।
চলতি বছর কানাডা রেকর্ড সংখ্যক দাবানলের মুখে পড়েছে। ভূমির হিসেবে যার পরিমাণ ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা প্রায় বাংলাদেশের সমান।
Leave a Reply